ইংরেজি বলায় জড়তা?
🔥
আমাদের অধিকাংশেরই একটি সাধারণ সমস্যা রয়েছে। বিশেষ করে যারা বাংলা মাধ্যমে পড়াশোনা করেছি তাদের মাঝে এই সমস্যাটি আরো বেশি প্রকট। আমরা সারা জীবনই ইংরেজির লিখিত ব্যবহার করে এসেছি। আমাদের মুখস্থ শব্দের ভান্ডার সুবিশাল আকৃতির। শব্দগুলো ব্যবহার করে তৈরি করে ফেলতে পারি সুন্দর সুন্দর বাক্যও। সাথে বাক্যগুলো হয় বেশ নির্ভুল। কিন্তু সমস্যাটা বাধে যখন কথা বলতে চাই ইংরেজিতে।
ইংরেজি ভাষা সম্পর্কে এত এত জ্ঞান থাকা সত্ত্বেও ইংরেজি বলতে গেলে মুখ থেকে দু’টো শব্দের বেশি বের হতে চায় না। ইংরেজি শিখার জন্য অগণিত বই, ওয়েবসাইট কিংবা অ্যাপ্লিকেশনগুলো কোনটাই যেন ঠিকমতো কাজে লাগছে না। কিন্তু এমনটি তো হওয়ার কথা না। ইংরেজি সম্পর্কে আপনার জ্ঞানের তেমন অভাব নেই। তারপরও কেন এত জড়তা?
মজার ব্যাপার হচ্ছে, একটি ভাষা লিখতে পারা এবং বলতে পারার জন্য যে দক্ষতাগুলো প্রয়োজন তা একে অন্যের থেকে বেশ ভিন্ন। ভালো ইংরেজি বলতে পারে এমন একজন সঙ্গীর সাথে নিয়মিত ইংরেজি বলার অভ্যাস গড়ে তুললে এই ভাষায় কথা বলা অনেকটা সহজতর হয়ে উঠবে। তবে যদি আপনার পরিচিত এমন কোন সংগী না থাকে? অথবা আপনি যদি কারো সামনে ইংরেজিতে কথা বলা অনুশীলন করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ না করেন, তবে? তাহলেও কোন সমস্যা নেই।
একটি ভাষা সম্পূর্ণরূপে রপ্ত করার জন্য লেখা, পড়া এবং শোনা এই তিনটি কাজের সমন্বয় প্রয়োজন। এই তিনটি কাজ কারো সাহায্য ছাড়াই নিজে নিজেই করা যায়। চলুন এমন কিছু পদ্ধতি দেখে নেই যার মাধ্যমে অন্য কারো সাহায্য ছাড়াই নিজে নিজেই হয়ে উঠবেন ইংরেজিতে কথা বলায় দক্ষ।
দারুণ সব লেখা পড়তে ও নানা বিষয় সম্পর্কে জানতে ঘুরে এসো আমাদের ব্লগের নতুন পেইজ থেকে
১) ইংরেজিতে চিন্তা করুন:
নতুন কোন ভাষায় কথা বলা রপ্ত করতে গেলে সর্বপ্রথম যে সমস্যাটির মুখোমুখি আমরা হই সেটি হচ্ছে, সেই ভাষায় চিন্তা করতে না পারা। আপনি যদি আপনার মাতৃভাষায় একটি কথা চিন্তা করেন এবং ইংরেজিতে সেই কথাটি বলতে যান, তাহলে আপনাকে মনে মনে মাতৃভাষা থেকে সেই কথাটিকে ইংরেজিতে অনুবাদ করার ঝামেলা পোহাতে হবে। এটি শুনতে যতটা সহজ মনে হচ্ছে, নিজে যখন এর সম্মুখীন হবেন তখন সমস্যাটির প্রকটতা বুঝতে পারবেন।
দু’টো ভাষায় দক্ষ, এমন ব্যক্তিরও এই অনুবাদ কাজে বেশ সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। তাহলে বোঝা যাচ্ছে যে এই সমস্যার একটি সমাধান বের করতে হবে। সমাধানটি হচ্ছে বিভিন্ন বিষয়বস্তু ইংরেজিতে চিন্তা করার অভ্যাস করতে হবে। এটি আপনি যেকোনো সময় যেকোনো জায়গায় করতে পারবেন। যেমন ধরুন, আপনার দিন কেমন গেল সে সম্পর্কে চিন্তা করতে পারেন। অথবা আপনি কী খেতে চাচ্ছেন সে সম্পর্কে চিন্তা করতে পারেন। অর্থাৎ কী নিয়ে চিন্তা করবেন তার কোনো বাঁধা ধরা নিয়ম নেই। ইংরেজি কোন শব্দের অর্থ না জানলে কিংবা প্রয়োগ না বুঝলে ইংরেজি থেকে ইংরেজি অভিধানগুলো ব্যবহার করতে পারেন। এতে করে ইংরেজিতে আপনি আপনার মনের সকল ভাব মাতৃভাষার মতো করেই প্রকাশ করতে শিখবেন। কিছুদিন এই পদ্ধতি অনুসরণ করলে আপনি দেখবেন যে ইংরেজিতে কথা বলা আপনার কাছে পূর্বের চেয়ে সহজ মনে হচ্ছে।
২) নিজের সাথে কথা বলুন:
যখনই আপনি বাসায় কিংবা অন্য কোন জায়গায় একলা থাকেন তখনই আপনি নিজের সাথে ইংরেজিতে কথা বলার চেষ্টা করতে পারেন। পূর্ববর্তী পদ্ধতি অনুসরণ করে যেহেতু আপনি ইংরেজিতে ভাবতে শুরু করেছেন, সেহেতু সেই ভাবনা গুলোকে জোরে জোরে বলতে শুরু করুন। যদি আপনার ইংরেজি শুদ্ধ করার মতো কেউ না থাকে আশেপাশে, তাহলে জোরে জোরে ইংরেজিতে কথা বলা শুরু করুন। এতে করে আপনি ইংরেজিতে কথা বলায় আরো স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবেন এবং নিজের ভুল নিজেই ধরতে পারবেন।
৩) আয়না ব্যবহার করুন:
যখনই সময় পান একটি নির্দিষ্ট বিষয় পছন্দ করে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে পড়ুন এবং কিছু নির্দিষ্ট সময়ের জন্য কথা বলতে শুরু করুন। কথা বলার ভাষা যেন অবশ্যই ইংরেজি হয়। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলার উদ্দেশ্য হচ্ছে এতে করে আপনি আপনার মুখ, চেহারা এবং শারীরিক অঙ্গভঙ্গি দেখতে পারবেন। এতে করে আপনি আপনার প্রকাশভঙ্গি আরো সুন্দর করতে পারবেন এবং আপনার কাছে মনে হবে যে আপনি অপর একজনের সাথে কথা বলছেন।
দুই তিন মিনিটের যে নির্দিষ্ট সময়সীমা আপনি নির্ধারণ করেছিলেন, সে সম্পূর্ণ সময়সীমা জুড়েই কথা বলতে থাকুন। থামবেন না যেন! যদি কোনো কারণে কোনো একটি শব্দে গিয়ে আটকে যান, তবে মনের ভাব প্রকাশ করার জন্য ভিন্ন পন্থা অবলম্বন করুন। ভিন্ন কোনো সমার্থক শব্দ দ্বারা ভুলে যাওয়া শব্দটির কাজ চালিয়ে দিতে পারেন। নির্দিষ্ট সময়সীমা শেষে সেই শব্দটি খুঁজে বের করে তার সঠিক প্রয়োগটি শিখে নিন। এর ফলে আপনি বুঝতে পারবেন কোন ধরনের শব্দ গুলো বা বাক্যগুলোতে কথা বলার সময় আপনার সমস্যা হয়।
৪) বাকপটুতার উপর জোর দিন, ব্যাকরণের উপর নয়:
খেয়াল করুন, ইংরেজিতে কথা বলার সময় আপনি কতবার আটকে যান। আপনি যতবার আটকে যাবেন আপনাকে ততটা কম আত্মবিশ্বাসী মনে হবে এবং আপনি নিজেও ততটা কম স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতে শুরু করবেন। এর জন্য আপনি পূর্বে উল্লিখিত পদ্ধতিতে আয়নার ব্যবহার করতে পারেন। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলার সময় নিজেকে নিজের চ্যালেঞ্জ করুন যে সম্পূর্ণ সময়সীমায় একবারও আটকানো ছাড়া আপনি কথা বলবেন।
এর ফলে যা হবে তা হচ্ছে, আপনার বাক্যগুলো ব্যাকরণগতভাবে সম্পূর্ণ শুদ্ধ হবে না। কিন্তু এটা কোন সমস্যা নয়। সম্পূর্ণরূপে শুদ্ধভাবে ইংরেজি বলতে না পারলেও আপনি যদি অনর্গল ইংরেজি বলতে পারেন তাহলেও আপনার কথা সবাই বুঝতে পারবে এবং আপনার কথা আরো সুন্দর শোনাবে। অনর্গল ইংরেজি বলা রপ্ত করে ফেললে তারপর আপনি নজর দিতে পারেন আপনার ব্যাকরণ ঠিক করার দিকে। ধীরে ধীরে সেটিও ঠিক হয়ে যাবে।
৫) কঠিন শব্দ উচ্চারণ করতে শিখুন:
কঠিন শব্দ বলতে সেসকল শব্দকে বোঝানো হচ্ছে যেগুলো দ্রুত বলতে গেলে সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। প্রাত্যহিক জীবনে ইংরেজি বলার সময় ব্যবহার্য এ শব্দগুলোর একটি তালিকা তৈরি করে ফেলুন। এগুলো নিয়মিত বলার অনুশীলন করুন। এ ধরনের কঠিন শব্দগুলো দ্বারা গঠিত বাক্য নিয়ে কিছু খেলা রয়েছে। সেই বাক্যগুলো কে কতবার শুদ্ধভাবে পুনরাবৃত্তি করতে পারে তার উপর বিজয়ী নির্ধারিত হয়। এ ধরনের খেলা গুলোতে অংশগ্রহণ করুন। এর ফলে এ কঠিন শব্দ গুলোকে কিভাবে সহজে উচ্চারণ করতে হয় তা আপনি শিখে ফেলতে পারবেন। ফলে দূর হয়ে যাবে আপনার জড়তা।
৬) শুনুন এবং পুনরাবৃত্তি করুন:
আমরা যারা ইংরেজি টিভি সিরিজ দেখি অথবা ইউটিউবে ইংরেজি ভিডিও দেখি, তারা এ অনুষ্ঠানগুলোর ব্যবহার করে ইংরেজিতে কথা বলা শিখতে পারি। যেকোনো একটি অনুষ্ঠান থেকে কয়েকটি লাইন নির্বাচন করুন। লাইনগুলো একাধিকবার ভালো করে শুনুন। সেই লাইনগুলো অনুষ্ঠানটিতে ব্যবহার করা স্বর, দ্রুততা এবং স্বরভঙ্গি এর অনুকরণ করে পুনরাবৃত্তি করার চেষ্টা করুন। দু একটি শব্দ ভুলে গেলেও বড় কোন সমস্যা নেই। তবে খেয়াল রাখবেন যেন আপনি আটকে না যান। অনর্গল কথা বলতে থাকুন এবং অনুষ্ঠানের বক্তার মত করে বলতে চেষ্টা করুন। এতে কিছুটা অভ্যস্ত হয়ে গেলে সাবটাইটেল বন্ধ করে শুধু শুনে শুনে কথাগুলো পুনরাবৃত্তি করার চেষ্টা করুন। এতে করে আপনার দক্ষতা বেড়ে যাবে এবং ইংরেজি ভাষায় দক্ষ মানুষদের মত করে কথা বলতে শিখে যাবেন।
৭) কোন শব্দে কোথায় জোর প্রদান করা হয়েছে তা খেয়াল করুন:
ইংরেজি ভাষা একটি মজার ব্যাপার হচ্ছে দেখতে একই শব্দ উচ্চারণের সময় ভিন্ন জায়গায় জোর প্রদান করার কারণে অর্থ ভিন্ন হয়ে যায়। যেমন ধরুন, “অ্যাড্রেস” শব্দটিতে আপনি যদি “অ্যাড” এর উপর বেশি জোর প্রদান করেন তাহলে এর দ্বারা বুঝাবে কোন একটি ঠিকানা কে। আবার যদি এই একই শব্দের “ড্রেস” অংশটির উপর আপনি বেশি জোর প্রদান করেন তাহলে এর মানে দাঁড়াবে কাউকে উদ্দেশ্য করা। তাই কোন শব্দের ক্ষেত্রে কোন স্থানে উচ্চারণের সময় জোর প্রদান করলে কি অর্থ দাঁড়ায় সেটি জানতে হবে।
৮) ইংরেজিতে গান গাওয়ার চেষ্টা করুন:
আপনার পছন্দের ইংরেজি গান গুলো শুনে পুনরাবৃত্তি করার চেষ্টা করুন। সাধারণ “পপ” জনরার গান গুলো পুনরাবৃত্তি করা শিখে গেলে “র্যাপ” জনরার গান গুলোর দিকে নজর দিতে পারেন। জনরা গুলো আপনার খুব একটা পছন্দ না হলেও আপনার ইংরেজি বলায় এগুলো রাখতে পারে বিশেষ অবদান। কারণ এ ধরনের গান গুলোতে সাধারনত ব্যবহার করা শব্দগুলো নিত্যদিনের ব্যবহার্য ইংরেজি। তবে এ ধরনের গায়কগণ খুব দ্রুত শব্দ উচ্চারণ করেন বলে সহজে আপনি শব্দগুলো বুঝতে পারবেন না। তবে একবার যদি আপনি শব্দগুলো বুঝতে সমর্থ হয়ে যান, তবে আপনি ইংরেজিতে অনর্গল কথা বলার দিকে একধাপ এগিয়ে গেলেন।
৯) নির্দিষ্ট পরিস্থিতিগুলোর জন্য পূর্ব প্রস্তুতি গ্রহণ করুন:
আমাদের অধিকাংশই ইংরেজি শিখি বিশেষ কোন উদ্দেশ্যে। যেমন ধরুন চাকরির ইন্টারভিউর জন্য। এরকম নির্দিষ্ট পরিস্থিতির জন্য পূর্ব প্রস্তুতি নিয়ে রাখলে আপনি সহজেই সেখানে ইংরেজি বলতে পারবেন। যেমন ধরুন ইন্টারভিউতে যাওয়ার আগে আপনি যদি সাধারন প্রশ্নগুলো বের করে সেগুলোর উত্তর ইংরেজিতে অনুশীলন করতে থাকেন, তাহলে ইন্টারভিউতে গিয়ে আপনার কথা বলার সময় আটকে যাওয়ার সম্ভাবনা অনেকাংশে কমে যাবে। এই পদ্ধতি অনুসরণ করলে বেড়ে যাবে আপনার আত্মবিশ্বাস।
১০) ভয় না পেয়ে শিথিল হন:
ইংরেজি কথা বলার সময় আমাদের মূল সমস্যা হচ্ছে আমরা ভাবতে শুরু করি যে আমাদের কেমন শোনাচ্ছে। এতে করে মানসিক চাপ বেড়ে যায় এবং কথা বলার সময় আটকে যাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। তাই কোথাও আটকে গেলে একটি দীর্ঘ শ্বাস নিন এবং পুনরায় শুরু করুন। প্রয়োজনে ধীরে ধীরে কথা বলুন। পরবর্তী বাক্য বলার জন্য প্রয়োজনে চিন্তা করার জন্য একটু সময় নিন। নিজেকে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করাতে যা করা প্রয়োজন তা করুন।
১১) মাতৃভাষার যে কোন গল্প ইংরেজিতে বলুন:
আপনার ইংরেজিতে কথা বলা আগের চেয়ে কতটা উন্নত হয়েছে তা বুঝার জন্য মাতৃভাষায় সুপরিচিত একটি গল্প ইংরেজিতে বলতে শুরু করুন। এক্ষেত্রেও শুদ্ধভাবে বলার চেয়ে অনর্গল ইংরেজি বলার দিকে বেশি জোর দিন। প্রতিটি বাক্য জোরে জোরে বলতে থাকুন। এতে করে নিজের বাক্য নিজে শুনে নিজেই তা মূল্যায়ন করতে পারবেন।
এ সহজ পদ্ধতি গুলো অনুসরণ করলে আপনি সহজেই যোগ্য হয়ে উঠবেন ইংরেজি ভাষায় কথা বলায়। তবে এর জন্য প্রয়োজন যথেষ্ট অধ্যবসায়। সহজে হাল ছেড়ে দিবেন না যেনো। সাফল্য ছোঁয়া দিবেই একসময়।
//
Collected